শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

অফিস নয় যেন টাঁকশাল

অফিস নয় যেন টাঁকশাল

স্বদেশ ডেস্ক: রাজধানীর নিকেতন থেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এসএম গোলাম কিবরিয়া (জিকে) শামীমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। এ সময় অস্ত্রসহ তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শামীমের কার্যালয় থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ নগদ অর্থ এবং ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর জব্দ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জিকে শামীমের নিকেতনের ডি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর বাসা ঘিরে ফেলে র‌্যাব। এর আগে একই এলাকার জিকে শামীমের আরেকটি বাসা থেকে তাকে ডেকে আনা হয়। পরে গ্রেপ্তার করে অভিযান চালায় র‌্যাব।

অভিযান শেষে গতকাল বিকালে শামীমের অফিসে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি জিকে শামীমের কাছে কিছু অর্থ ও অস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া তিনি চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত ছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তার বাসা ঘেরাও করি। এ সময় তার সাত বডিগার্ডকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে সাতটি শটগান জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ গুলি। পরে তথ্য নিয়ে তার অফিসে অভিযান পরিচালনা করি। তিনি আরও বলেন, তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়। ১ কোটি ৮০ নগদ অর্থ, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরও পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর তার মায়ের নামে আর বাকিগুলো নিজ নামে। কিছু মাদক পেয়েছি এবং একটি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে। শামীমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই স্বীকার করি, তার ঠিকাদারি ব্যবসা আছে। কিন্তু তার নামে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ মানি লন্ডারিং আইনের অপরাধ বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা তদন্ত করে দেখব তার কাছে এত টাকা কীভাবে এসেছে। টাকার উৎস সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হবে।

অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মায়ের কোনো ব্যবসা নেই, কিন্তু তার নামে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর ছিল। যে সাতটি অস্ত্র পাওয়া গেছে এগুলো চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জব্দ করা অর্থ ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে অবৈধ উপায়ে আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উনি যদি এসব অভিযোগকে আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন তা হলে ছাড়া পাবেন। আর যদি অভিযোগগুলো সত্য হয় তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। উনি কোনো দলের সদস্য কিনা তা আমরা জানি না। এটা দলীয় বিষয়। তারা তার দোষ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শামীমের ওই নিকেতনের কার্যালয়ে ঢুকে প্রথমেই দেখা যায় বিশাল গ্যারেজ। গ্যারেজের পাশে কাচ দিয়ে ঘেরা একটি অফিসকক্ষ, এখানে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা বসেন। কক্ষের পাশে দুই পাল্লার একটি কাঠের দরজা। দরজার দামি কাঠের চৌকাঠ চোখে পড়ার মতো। দরজা দিয়ে ঢুকতেই ভেতরে তিন তলায় যাওয়ার সিঁড়ি। মার্বেল টাইলসের সিঁড়িটিতে রয়েছে নকশা করা কাঠের রেলিং। চারতলা পর্যন্ত উঠে গেছে সিঁড়িটি। পুরো বাসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তৃতীয় তলায় শামীমের বিশাল বসার কক্ষ। পুরো কক্ষটিতে দামি বাতি, কাঠ দিয়ে সাজানো। বড় আকারের দুটি টিভি রয়েছে ঘরে। তিন সেট সোফা ও একটি বড় টেবিল রয়েছে। ওই টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা টাকার বান্ডিল, মদের বোতল ও অস্ত্র। ওই কক্ষের পাশেই আছে শামীমের ব্যক্তিগত কক্ষ।

অভিযানে একের পর বেরিয়ে আসতে থাকে অর্থ আর অর্থ। এমনকি তার টয়লেট থেকেও টাকার বড় থলে বের করে আনে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তাকে অনেকটা নির্ভার দেখাচ্ছিল। অভিযানের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক টাকার বান্ডিল, মদ, বিদেশি ডলার বের করে দিচ্ছিলেন জিকে শামীম।

এর আগে বুধবার অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ মাহমুদের মুখেই উঠে আসে শামীমের অবৈধ সাম্রাজ্যের বর্ণনা। এর পরই শামীমকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, শামীমের বিরুদ্ধে টেন্ডার বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের কাছে। দেহরক্ষীদের অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ স্বার্থ হাসিল করতেন শামীম। তার নিজের ব্যক্তিগত অস্ত্রটির লাইসেন্স পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম ‘শামীম ঠিকাদার’ নামে পরিচিত। জিকেবি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877